সিলেট বিমানবন্দর থেকে পণ্যবাহী ফ্লাইট শুরু


বাসস, ঢাকা | Published: 2025-04-27 23:55:13 BdST | Updated: 2025-05-12 12:40:33 BdST

ভারত হঠাৎ করে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে দেওয়ার পর সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ পণ্যবাহী বিমান চলাচল শুরু হয়েছে।

রোববার সন্ধ্যায় গ্যালিস্টেয়ার এভিয়েশন পরিচালিত একটি চার্টার্ড এয়ারবাস এ৩৩০-৩০০ পণ্যবাহী বিমান স্পেনের উদ্দেশে সিলেট বিমানবন্দর ত্যাগ করে। ৬০ টন তৈরি পোশাক বহনকারী এই বিমান দুবাই হয়ে স্পেনের জারাগোজায় যাবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এই কার্যক্রমে গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিং পরিষেবা প্রদান করেছে।

বিজ্ঞাপন

কার্গো ফ্লাইট উদ্বোধনকালে বাণিজ্য এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আজকের কার্গো কার্যক্রম আমাদের পণ্যবাহী পরিবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। এটি দেশের রপ্তানি সুবিধায় ঘাটতি পূরণে সহায়তা করবে।

তিনি বলেন, ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। বিমান কার্গো পরিষেবা আরও সাশ্রয়ী করার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং শুল্ক সংশোধনের জন্যও সম্মিলিত প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। আমরা বিদেশে পণ্য পরিবহন খরচ কমিয়ে আনব এবং তা ভারতের ভেতর দিয়ে ট্রান্সশিপমেন্টের খরচের চেয়েও সস্তা করে তুলব।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. মুশফিকুল ফজল আনসারী এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া সভাপতিত্ব করেন।

বিজ্ঞাপন

মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, আমরা কারো ওপর নির্ভরশীল নই।  আমরা পারি এবং আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই গড়বো। সিলেটের মাটি থেকে পণ্য এখন সরাসরি বিশ্ব বাজারে পাঠানো হবে।

এই নতুন যাত্রা বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে জানান আনসারী।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, আজ আমরা সিলেট থেকে পণ্যবাহী বিমান চলাচলের উদ্বোধন করছি। শিগগিরই আমরা চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে কার্গো পরিবহন শুরু করব। জুন মাস থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকেও কার্গো পরিবহন পরিচালিত হবে।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে সিলেট বিমানবন্দর থেকে সপ্তাহে দুটি চার্টার্ড পণ্যবাহী ফ্লাইট পরিচালিত হবে এবং চাহিদা অনুযায়ী এর ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানো হবে।

মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, বেবিচক এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের আগে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালে অতিরিক্ত জনবল মোতায়েন করেছে।

তিনি বলেন, আমাদের বিদ্যমান অবকাঠামো শিগগিরই দুই থেকে তিনগুণ বেশি কার্গো পরিবহন করতে সক্ষম হবে। ইতোমধ্যেই সিলেটের নবায়নকৃত কার্গো টার্মিনালে উল্লেখযোগ্য হ্যান্ডলিং সক্ষমতা রয়েছে।

ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি করতে উৎসাহিত করার জন্য ঢাকার নেতৃস্থানীয় কার্গো হ্যান্ডলারদের পাশাপাশি সিলেটের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সদস্যদেরও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

সিলেট ও চট্টগ্রাম ছাড়াও হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নবনির্মিত তৃতীয় টার্মিনাল বাংলাদেশের রপ্তানি কার্গো ধারণক্ষমতা বার্ষিক ২ লাখ টন থেকে ৫ লাখ ৪৬ হাজার টনে উন্নীত করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার মধ্যে ৩৬ হাজার বর্গমিটারের একটি নিবেদিত কার্গো জোন থাকবে।

এই মাসের শুরুতে কলকাতা ও দিল্লির মতো ভারতীয় বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক পরিবহনের চার বছরের চুক্তি বাতিল করে দেওয়া হয়। ভারতের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) মতে, প্রায় ছয়শ টন বা বাংলাদেশের সাপ্তাহিক পোশাক বিমান রপ্তানির ১৮ শতাংশ ভারত হয়ে বিদেশে যায়।

বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ টন পোশাক বিমানের মাধ্যমে রপ্তানি করে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ ৩০০ টন পণ্য পরিবহনের জন্য নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু পিক পিরিয়ডে এতে প্রায়ই  ১ হাজার ২০০ টনেরও বেশি  পণ্য পরিবহন করা হয়।

বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী বিমানগুলো হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বার্ষিক এক লাখ ৭৫ হাজার টন কার্গো ভলিয়মের প্রায় ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ বহন করে।

বতর্মানে এমিরেটস, ক্যাথে প্যাসিফিক, কাতার এয়ারওয়েজ, টার্কিশ এয়ারলাইন্স ও  ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সসহ প্রধান বিমান সংস্থাগুলো শুধু ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিবেদিত কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করে।